Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পৌষ মাসের কৃষি (১৬ ডিসেম্বর-১৪ জানুয়ারি)

পৌষ মাসের কৃষি
(১৬ ডিসেম্বর-১৪ জানুয়ারি)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
পৌষ মাস। হেমন্ত শেষ। ঘন কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে শীতের আগমন। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের সবার জন্য রইল শীতের শুভেচ্ছা। শীতের মাঝেও মানুষের খাদ্য চাহিদা নিশ্চিতে কৃষক-কিষানি ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাঠের কাজে। মাঠের কাজে সহায়তার জন্য আসুন সংক্ষেপে আমরা জেনে নেই পৌষ মাসে সমন্বিত কৃষির সীমানায় কোন কাজগুলো আমাদের করতে হবে।
বোরো ধান
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন যারা এখনও  বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেননি তাদের জন্য পরামর্শ- বীজতলায় ব্রি ধান২৮/স্বল্পমেয়াদি জাতের পরিবর্তে ব্রি ধান৮৮ এবং বঙ্গবন্ধু ধান ব্রি ধান২৯ এর পরিবর্তে ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, বঙ্গবন্ধু ধান১০০, ব্রি ধান১০১, ব্রি ধান ১০২ চাষ করুন।
অতিরিক্ত ঠা-ার সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখা যায় এবং বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দেয়া যায়। সে সাথে প্রতিদিন সকালে চারার ওপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। এতে চারা ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। বীজতলায় সব সময় নালা ভর্তি পানি রাখতে হয়। চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিলে সুফল পাওয়া যায়। চারা রোপণের জন্য মূল জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে পানিসহ কাদা করতে হবে। জমিতে জৈবসার এবং শেষ চাষের আগে ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার দিতে হবে। চারার বয়স ৩৫-৪৫ দিন হলে মূল জমিতে চারা রোপণ করতে হয়। ধানের চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, সাধারণত গুছিতে কুশি দেখা দিলে দ্বিতীয় কিস্তি এবং কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন আগে শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করা ভাল।
গম
গমের জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। চারার বয়স ১৭-২১ দিন হলে গমক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে একরপ্রতি ১২-১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় এবং সেচ দিতে হয়। সেচ দেয়ার পর জমিতে জো এলে মাটির ওপর চটা ভেঙে দিতে হবে। গমের জমিতে যেখানে ঘনচারা রয়েছে সেখানে কিছু চারা তুলে পাতলা করে দেয়া ভাল।
ভুট্টা
ভুট্টাক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হয়। গাছের নিচের দিকের মরা পাতা ভেঙে দেয়া ভাল। ভুট্টার সাথে সাথী বা মিশ্র ফসলের চাষ করে থাকলে সেগুলোর প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে।
আলু
চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হয়। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।  ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে। এ সময় আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা যায়। নিম্ন তাপমাত্রা, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস পাওয়ার সাথে সাথে ডাইথেন এম-৪৫ অথবা ইন্ডোফিল এম-৪৫ অথবা ম্যানেকোজেব গ্রুপের যেকোন ছত্রাকনাশক  প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর স্প্রে করতে হয়। গাছে রোগ দেখা দেয়া মাত্রই ৭ দিন পর পর সিকিউর অথবা অ্যাক্রোভেট এম জেড ২ গ্রাম/লিটার হারে মিশিয়ে স্প্রে করা প্রয়োজন। মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ রাখতে হবে। তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হয়। আলু  গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটিরসমান করে গাছ কেটে রেখে দিতে হবে ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে। আলু তোলার পর  ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
তুলা
এ সময় তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হয়। তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে। রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা সংগ্রহ করা ভাল। ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে চট অথবা ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে।
ডাল ও তেল ফসল
মসুর, ছোলা, মটর, মাষকলাই, মুগ, তিসি পাকার সময় এখন। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ শতাংশ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হয়। এতে জমিতে উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে।
শাকসবজি
ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া, মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হয়। বিভিন্ন শাক যেমন- লালশাক, মুলাশাক, পালংশাক একবার শেষ হয়ে গেলে আবার বীজ বুনে দিতে পারেন। টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১৫টি ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। আক্রমণ তীব্র হলে কুইনালফস গ্রুপের কীটনাশক (দেবীকুইন ২৫ ইসি/ কিনালাক্স ২৫ ইসি/করোলাক্স ২৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার পরিমাণ মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। টমেটো সংগ্রহ করে বাসায় ৪-৫ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করার জন্য আধা পাকা টমেটোসহ টমেটো গাছ তুলে ঘরের ঠা-া জায়গায় উপুর করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলোকে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজিক্ষেতে চাহিদামাফিক নিয়মিত সেচ দিতে হবে। এ ছাড়া আগাছা পরিষ্কার, গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া, সারের উপরিপ্রয়োগ ও রোগবালাই প্রতিরোধ করা জরুরি।
পেঁয়াজ কন্দকে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন  
পেঁয়াজ রোপণ সময়ের উপর বীজ উৎপাদনের প্রভাব রয়েছে। বেশি আগাম রোপণে ফুলদন্ডে ফুলের সংখ্যা কম হয়। নাবিতে রোপণে গাছের বৃদ্ধি কম হয়, ফুল কম আসে এবং পার্পল ব্লচ রোগ ও থ্রিপস পোকার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়, তাছাড়া বিলম্বে রোপণ করলে সে সব বীজ ফসল কালবৈশাখী ঝড় ও শীলা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অক্টোবরের শেষ হতে মধ্য নভেম্বর মাস পর্যন্ত পেঁয়াজের মাতৃকন্দ রোপণের উপযুক্ত সময়। সারি হতে সারির দুরত্ব ২৫-৩০ সেমি. এবং কন্দ থেকে কন্দের দুরত্ব ১৫-২০  সেমি. হওয়া ভাল। নির্দিষ্ট দুরত্বে ছোট লাঙ্গল অথবা রডের টানা দ্বারা ৫-৬ সেমি. গভীর নালা টেনে উক্ত নালায় পেঁয়াজের মাতৃকন্দ রোপন করে পার্শ্ববর্তী মাটি দ্বারা মাতৃকন্দ ঢেকে দেওয়া আবশ্যক। মাতৃকন্দ বীজের পরিমাণ, বীজ উৎপাদনের জন্য আমাদের দেশে এক হেক্টর জমিতে ৮০০-৯০০ কেজি মাতৃকন্দের প্রয়োজন হয়।
পাতা পেঁয়াজ উৎপাদন
বারি পাতা পেঁয়াজ-১ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করা প্রয়োজন। প্রতি হেক্টরে সারি পদ্ধতিতে ৪-৫ কেজি এবং ছিটিয়ে বপন করলে ৬-৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। এক হেক্টর জমির জন্য ৬-৬.৫ লক্ষ চারা প্রয়োজন।
গাছপালা
বর্ষায় রোপণ করা ফল, ঔষধি বা কাঠ গাছের যত্ন নিতে হয়। গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে গাছকে খুঁটির সাথে বেঁধে দেয়া যায়। রোগাক্রান্ত গাছের আক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাই করে দিতে হবে। গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দেয়া জরুরি।
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, শীতকাল  শুকনো মৌসুম বলে মাটিতে রস কম থাকে। তাই প্রতি ফসলে চাহিদামাফিক সেচ প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। কৃষির মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারি। কৃষির যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা ১৬১২৩ এ নম্বরে যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে কল করে নিতে পারেন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা।

লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা,  টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল :editor@ais.gov.bd

পৌষ মাসের কৃষি (১৬ ডিসেম্বর-১৪ জানুয়ারি)

পৌষ মাসের কৃষি
(১৬ ডিসেম্বর-১৪ জানুয়ারি)

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম

পৌষ মাস ঘন কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে শীতের আগমন। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, শীতের মাঝেও মাঠের কাজে সহায়তার জন্য আসুন সংক্ষেপে আমরা জেনে নেই এ মাসে সমন্বিত কৃষির সীমানায় কোন কাজগুলো আমাদের করতে হবে।
বোরো ধান
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন যারা এখনও বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেননি তাদের জন্য পরামর্শ- বীজতলায় ব্রি ধান২৮/স্বল্পমেয়াদি জাতের পরিবর্তে ব্রি ধান৮৮ এবং ব্রি ধান২৯ এর পরিবর্তে ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান১০০ চাষ করুন। তুলনামূলক অল্প সময়ে অধিক ফলন ঘরে তুলুন। এছাড়াও অতিরিক্ত ঠাণ্ডার সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখা যায় এবং বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দেয়া যায়। সে সাথে প্রতিদিন সকালে চারার ওপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। বীজতলায় সব সময় নালা ভর্তি পানি রাখতে হয়। চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিলে সুফল পাওয়া যায়।
গম
গমের জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। চারার বয়স ১৭-২১ দিন হলে গমক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে একরপ্রতি ১২-১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় এবং সেচ দিতে হয়। সেচ দেয়ার পর জমিতে জো এলে মাটির ওপর চটা ভেঙে দিতে হবে। গমের জমিতে যেখানে ঘনচারা রয়েছে সেখান থেকে কিছু চারা তুলে পাতলা করে দেয়া ভাল।
ভুট্টা
ভুট্টাক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হয়।
আলু
চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হয়। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।  ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে।
তুলা
তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে।
ডাল ও তেল ফসল
মসুর, ছোলা, মটর, মাষকলাই, মুগ, তিসি পাকার সময় এখন। সরিষা বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শাকসবজি
ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজি নিয়মিত যত্ন নিতে হয়। বিভিন্ন শাক যেমন- লালশাক, মুলাশাক, পালংশাক একবার শেষ হয়ে গেলে আবার বীজ বুনে দিতে পারেন।
প্রাণিসম্পদ
শীতকালে পোলট্রিতে অপুষ্টি ও রোগবালাই প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে। শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোলট্রি ও গবাদিপ্রাণির শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মৎস্যসম্পদ
 এ সময়ে পুকুরে পানি কমে যায়, তাই মাছের বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার। পানি দূষিত হয়। মাছের রোগবালাইও বেড়ে যায়। এ সময় আগামী বর্ষায় রুইজাতীয় মাছকে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটাতে ইচ্ছুক চাষিগণ প্রজননক্ষম বয়ঃপ্রাপ্ত মাছ সংগ্রহ করে মজুদ পুকুরে রেখে দেয়া প্রয়োজন।  
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, শীতকাল  শুকনো মৌসুমে প্রতি ফসলে চাহিদামাফিক সেচ প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। কৃষির যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও যেকোনো প্রশ্নের সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা ও যে কোনো মোবাইল নাম্বার থেকে কল করতে পারেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে। আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা।

লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা,  টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল : editor@ais.gov.bd

 

 

পৌষ মাসের কৃষি (১৬ ডিসেম্বর-১৪ জানুয়ারি)

পৌষ মাসের কৃষি
(১৬ ডিসেম্বর-১৪ জানুয়ারি)
কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম
পৌষ মাস। ঘন কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে শীতের আগমন। শীতকাল কৃষির জন্য একটি নিশ্চিত মৌসুম। সুপ্রিয়  কৃষিজীবী ভাইবোন, নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল উৎপাদনে শীতের মাঝেও মাঠের কাজে সহায়তার জন্য আসুন সংক্ষেপে আমরা জেনে নেই এ মাসে সমন্বিত কৃষির সীমানায় কোন কাজগুলো আমাদের করতে হবে।
বোরো ধান
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন যারা এখনও বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেননি তাদের জন্য পরামর্শ- বীজতলায় ব্রি ধান২৮/স্বল্পমেয়াদি জাতের পরিবর্তে ব্রি ধান৮৮ এবং বঙ্গবন্ধু ধান ব্রি ধান২৯ এর পরিবর্তে ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, বঙ্গবন্ধু ধান১০০, ব্রি ধান১০১, ব্রি ধান ১০২ চাষ করুন। তুলনামূলক অল্প সময়ে অধিক ফলন ঘরে তুলুন। জলবায়ু পরিবর্তনে অতিরিক্ত ঠা-ার সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখা যায় এবং বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দেয়া যায়। সে সাথে প্রতিদিন সকালে চারার ওপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। বীজতলায় সব সময় নালা ভর্তি পানি রাখতে হয়। চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিলে সুফল পাওয়া যায়।
গম
গমের জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। চারার বয়স ১৭-২১ দিন হলে গমক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে একরপ্রতি ১২-১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় এবং সেচ দিতে হয়। সেচ দেয়ার পর জমিতে জো এলে মাটির ওপর চটা ভেঙে দিতে হবে। গমের জমিতে যেখানে ঘনচারা রয়েছে সেখান থেকে কিছু চারা তুলে পাতলা করে দেয়া ভাল।
ভুট্টা
ভুট্টাক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হয়।
আলু
চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হয়। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।  ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে।
তুলা
তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে।
ডাল ও তেল ফসল
মসুর, ছোলা, মটর, মাষকলাই, মুগ, তিসি পাকার সময় এখন। সরিষা বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শাকসবজি
ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি শীতকালীন সবজি নিয়মিত যত্ন নেয়া প্রয়োজন। বিভিন্ন শাক যেমন- লালশাক, মুলাশাক, পালংশাক একবার শেষ হয়ে গেলে আবার বীজ বুনে দেয়া যেতে পারে।
প্রাণিসম্পদ
এ সময় গর্ভবতী গাভীর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। সদ্য ভূমিষ্ঠ বাছুরকে গাভীর ওলানের শাল দুধ অবশ্যই খাওয়াতে হবে। কার্তিক মাসে জন্ম নেয়া গরু মহিষের বাছুরকে এ সময় কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। দুধালো গাভীর ওলান প্রদাহ রোগ, বাছুরের ডায়রিয়া, শীত ও কুয়াশার জন্য নিউমোনিয়া রোগ হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গবাদি পশুকে তড়কা, ক্ষুরারোগ, বাদলা, গলাফুলা এবং মোরগ-মুরগির রানীক্ষেত ও হাঁস-মুরগির কলেরা রোগের প্রতিষেধক টিকা দিয়ে নিতে হবে।   শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোলট্রি ও গবাদিপ্রাণির শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মৎস্যসম্পদ
 শীত মৌসুমে মাছ খাবার কম খায় এবং শরীরের বৃদ্ধিও কম হয়। তাই পুকুরে সার ব্যবহার কমিয়ে ফেলা উচিত। এই সময় রুই জাতীয় বড় মাছ জীবিত অবস্থায় এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিবহন সুবিধাজনক। তাই আগামী গ্রীষ্ম/বর্ষায় রুই জাতীয় মাছকে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটাতে ইচ্ছুক মৎস্য চাষীগণ প্রজননক্ষম বয়ঃপ্রাপ্ত মাছ সংগ্রহ করে মজুদ পুকুরে রেখে দেয়া প্রয়োজন। মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে মাসে অন্তত একবার জাল টেনে পরীক্ষা করতে হবে। পানির গুণগত মান ঠিক রাখতে এবং মাছের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কলি চুন ব্যবহার করা প্রয়োজন।
(প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসম্পদ বিষয়ে চাষিদের করণীয় সম্পর্কে তথ্যসমূহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত)
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, শীতকাল  শুকনো মৌসুমে প্রতি ফসলে চাহিদামাফিক সেচ প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। কৃষির যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও যেকোনো প্রশ্নের সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা ও যে কোনো মোবাইল নাম্বার থেকে কল করতে পারেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে। আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা। য়

লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা,  টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল :editorais.gov.bd

কৃতসা অ.মু-০২ নভেম্বর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ, ১৭ কার্তিক ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৫৯,৪০০ কপি


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon